বিমানবন্দর সড়কে খালেদা জিয়া

 


লন্ডনে চার মাস চিকিৎসা নেওয়ার পর দেশে ফেরা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বরণ করে নিতে বিমানবন্দর সড়কে ঢল নেমেছে দলটির নেতাকর্মী ও দেশের সর্বস্তরের মানুষের।এ এক অলৌকিক ঘটনা কেননা এর আগে বাংলাদেশের সাবেক কোন প্রাধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে এমন জনপ্রিয়তা লক্ষ করা যায় নি। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অবস্থানের ফলে কোনো পূর্ব নির্দেশনা না থাকলেও ‘বাধ্য হয়ে’ বনানী থেকে গুলশানগামী সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।ট্রাফিক গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. জিয়াউর রহমান জানিয়েছেন, বনানী থেকে গুলশান দুই নম্বর সড়কের মুখে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। গুলশানের দিকে যেতে চাওয়া যানবাহনকে সামনে এগিয়ে বনানী ১১ নম্বর সড়ক ব্যবহার করতে বলছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা।উপকমিশনার মো. জিয়াউর রহমান বলেন, “আমাদের সড়ক বন্ধের কোনো নির্দেশনা ছিল না। মানুষজনের অবস্থানের ফলে কোন গাড়ি ঢুকতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে সড়কটি আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”এছাড়া সব সড়কে এখন পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানিয়েছেন ট্রাফিক গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার।সবাইকে ফুটপাতে অবস্থান নিতে দল ও পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হলেও নেতাকর্মীদের ভিড় ফুটপাত পেরিয়ে সড়কে চলে আসে।মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে খালেদা জিয়াকবে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বেলা সোয়া ১১টার দিকে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি বিমানবন্দর থেকে বাসার পথে রওনা হয়। গাড়িতে সামনের আসনে তাকে বসতে দেখা গেছে খালেদা জিয়াকে।বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনালে বিএনপি চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান।খালেদা জিয়ার জন্য গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে তার বাসভবন ‘ফিরোজা’ পুরোপুরি প্রস্তুত করা হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।এদিন নেত্রীকে বরণ করে নিতে ভোরের আলো ফোটার পর থেকেই থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হতে শুরু করেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বনানী, খিলক্ষেত, বিমানবন্দরে অবস্থান নেন।তারা পিকআপ কিংবা বাসে করে গান বাজাতে-বাজাতে দলের পতাকা, দেশের পতাকা নিয়ে উপস্থিত হন সড়কে। কেউ-কেউ মাথায় দলের পতাকা লাগিয়ে আসেন। কারো হাতে শোভা পায় দলীয় ব্যানার, ফেস্টুন।কোনো কোনো গ্রুপ এসেছে ব্যান্ডপার্টি নিয়ে। বিমানবন্দর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ পর্যন্ত নেত্রীকে বরণ করে নিতে ‘খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছার স্বাগতম’; ‘তারেক জিয়া বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’; ‘খালেদা জিয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়িনাই’ বিভিন্ন স্লোগান ধরেছেন নেতাকর্মীরা।নেতাকর্মীদের অবস্থান ঘিরে সড়কে ও বিমানবন্দর এলাকায় বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্য, পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন ও আনসার সদস্যকে অবস্থান নিতে দেখা যায়।বেলা ১১ টা পর্যন্ত বনানী থেকে বিমানবন্দরগামী সড়কে যাবাহনের কিছুটা চাপ থাকলেও বিপরীত পাশের সড়কে যানবাহনের চাপ দেখা যায়নি।ধামরাই থেকে সকাল সাতটায় রওনা হয়ে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে সকাল ৯টায় বনানীতে আসেন স্থানীয় কৃষকদলের সদস্য হাবীবুর রহমান।তিনি বলেন, “আমরা গাড়ি নিয়ে আসছি, সকাল নয়টা থেকেই দাঁড়িয়ে আছি। ম্যাডাম দেশে ফিরতেছেন এইটা আমাদের জন্য আনন্দের দিন। আমরা ম্যাডামকে দেখতে এসেছি।”কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, “ম্যাডাম আসতেছেন এজন্য আমরা দলের পক্ষ থেকে আসছি। দলের বাইরে অনেক সাধারণ মানুষও আজ এসেছেন।খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে ‘গতি আসবে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “নিশ্চই আমাদের জন্য কোনো নির্দেশনা থাকবে, যেটা আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যে বুঝা যাবে।”সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরা ঘিরে ঢাকার সড়কে যানজট হতে পারে–এমন শঙ্কায় বিদেশগামী যাত্রীদের বিমানবন্দরে যেতে হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ করে এয়ারলাইন্সগুলো। বিমানবন্দর এলাকায় নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post